অন্যের লেখাকে নিজের নামে চালালে তাকে কুম্ভীলকবৃত্তি (ইংরেজিতে plagiarism) বলে। একজনের লেখা অন্য আরেকজনের নামে তৃতীয় কেউ চালিয়ে দিলে তাকে কি বলা হবে ? করোনা ভাইরাসের উৎপাত শুরু হওয়ার পরে, “শঙ্খচিল” (‘আমাদের দেখা হোক মহামারী শেষে,/আমাদের দেখা হোক জিতে ফিরে এসে।’) নামের একটা কবিতা হোয়াটস্অ্যাপে জীবনানন্দ দাশের নামে ভাইরাল হয়। দেখেই বোঝা যায়, ওটা জীবনানন্দের লেখা নয়। ইউটিউবে জীবনানন্দ দাশ ও শঙ্খ ঘোষের কবিতা বলে এটি চলছে। ইউটিউবে অন্য একটি ভিডিওতে কবিতাটিকে জনৈক পার্থ মুখার্জির লেখা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘মঙ্গলকোট ডট কম’-এও কবিতাটি কিছুদিন আগে পার্থ মুখার্জির নামে পাওয়া যেত। আবার ফেসবুক লাইভ-এ জনৈক সায়ন দাস কবিতাটিকে তাঁর লেখা বলে দাবি করেছেন। জানি না, আরো কারো নামে কবিতাটি কোথাও পাওয়া যায় কিনা।
এখানে অনুরূপ আর একটি অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছি। বিখ্যাত লেখিকা অমৃতা প্রীতমের নামে একটি ইংরেজি কবিতা বেশ কিছু দিন ধরে হোয়াটস্অ্যাপে ঘুরছে। এ বছর জুন মাসের 19 তারিখে কবিতাটি আমি বাংলায় অনুবাদ করে অমৃতা প্রীতমের নাম দিয়ে হোয়াটস্অ্যাপে পোস্ট করি। ক-দিন বাদে হিন্দুস্তান টাইমস-এর অনলাইন সংস্করণে ওই 19 জুনেরই একটা প্রতিবেদনে পড়ি, ওই কবিতাটি অমৃতা প্রীতমের লেখা নয়, ওটি জবলপুরের কবি বাবুষা কোহলির লেখা। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূল কবিতাটি হিন্দিতে লেখা– ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে অমৃতা প্রীতমের নামে চলছে। কবিতাটির ইংরেজি ভার্সন ও তা থেকে আমার করা বাংলা অনুবাদ নীচে তুলে দিলাম।
Will
Fully conscious and in good health I am writing today my will … After my death Ransack my room Search each item That is scattered Unlocked Everywhere in my house Donate my dreams To all those women Who between the confines of The kitchen and the bedroom Have lost their world Have forgotten years ago What it is to dream Scatter my laughter Among the inmates of old-age homes Whose children Are lost To the glittering cities of America There are some colours Lying on my table With them dye the sari of the girl Whose border is edged With the blood of her man Who wrapped in the tricolor Was laid to rest last evening Give my tears To all the poets Every drop Will birth a poem I promise My honour and my reputation Are for the woman Who prostitutes her body So her daughter can get an education Make sure you catch the youth Of the country, everyone And inject them With my indignation They will need it Come the revolution My ecstasy Belongs to That Sufi Who Abandoning everything Has set off in search of God Finally What’s left My envy My greed My anger My lies My selfishness These simply Cremate with me
আমার শেষ ইচ্ছা
সম্পূর্ণ সুস্থ শরীর ও মনে আজ আমার শেষ ইচ্ছার বয়ান লিখছি.... আমার মৃত্যুর পরে আমার ঘরটাকে তোমরা তছনছ করে দিও খোলা বাড়ির সর্বত্র ছড়িয়ে-থাকা প্রতিটা জিনিস তোমরা তন্নতন্ন করে খুঁজো। আমার স্বপ্ন বিলিয়ে দিও সেই নারীদের-- যাঁরা রান্নাঘর ও শোওয়ার ঘরের পরিসরে তাঁদের পৃথিবীটাকে হারিয়ে ফেলে বহুদিন আগেই স্বপ্ন দেখার কথা ভুলে গেছেন। আমার অট্টহাসি বৃদ্ধাশ্রমের বয়স্ক আবাসিকদের মুখে ছড়িয়ে দিও এঁদের সন্তানেরা আমেরিকার ঝলমলে শহরে হারিয়ে গেছে। আমার টেবিলে-রাখা রং দিয়ে সেই মেয়েটার শাড়ি রং করে দিও-- যার শাড়ির পাড়ে ওর স্বামীর রক্তের দাগ লেগে আছে বেচারি মেয়েটার স্বামী গতকাল সন্ধ্যা থেকে ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকায় আচ্ছাদিত হয়ে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে। আমার চোখের জল কবিদের বিলিয়ে দিও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমার অশ্রুর প্রতিটি বিন্দুতে এক একটা কবিতার জন্ম হবে। আমার সম্মান ও সুনাম সেই মেয়েগুলোর ভাগে রেখো-- যাঁরা তাঁদের মেয়েদের শিক্ষার জন্য নিজেদের শরীর বিক্রি করতে বাধ্য হন। আমার ক্রোধমিশ্রিত যন্ত্রণা অল্পবয়সী তরুণ-তরুণীদের দিও ওদের এটার দরকার দেশে বিপ্লব আনার জন্য। আমার উচ্ছ্বাস বিলিয়ে দিও সেই সুফিদের, যাঁরা ঈশ্বরের খোঁজ করার জন্য জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন। পরিশেষে পড়ে থাকা আমার ঈর্ষা লোভ রাগ মিথ্যা ও স্বার্থপরতাকে আমার দেহের সঙ্গে পুড়িয়ে দিও।
মাঝে মাঝে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ইংরেজি কবিতা পড়ে ভালো লেগে যায়। কখনো কখনো সেগুলি বাংলায় অনুবাদ করে যাঁদের নামে কবিতাগুলো ইংরেজিতে প্রচারিত, বাংলা অনুবাদে তাঁদের নাম দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করি। এক জনের কবিতা আর একজনের নামে যেভাবে চলছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সামাজিক মাধ্যমে পড়া কোনো ইংরেজি কবিতার বাংলা অনুবাদ করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার সময় তাতে কারো নাম দেব না। কারণ, তাতে নিজের ওপর উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর দায় এসে পড়তে পারে!